Header Ads

ইলন মাস্ক






ইলন মাস্ক যাকে নিউ ইর্য়ক টাইমস  “ধাতব স্যুটবহিীন আয়রনম্যান ” বলে ঘোষণা করছে  প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পত্তির মালিক ইলন মাস্ককে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়। বিচিত্র চিন্তাধারার এই মানুষটির আপাদমস্তক জীবনধারা আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রেরণার জোগান দেয়। অনেকের মতে হালের ইলন মাস্ক অনেকটাই সেই কেএফসির কর্নেল স্যান্ডারস কিংবা আলিবাবার জ্যাক মা এর প্রতিচ্ছবি, যারা শত ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সাফল্যের চূড়ায় আহরণে সক্ষম হয়েছিলেন।

দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় জন্ম নেয়া মার্কিন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক এর পুরো নাম ইলন ‘রীভ’ মাস্ক। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৮শে জুন। ১৯৯৯ সালে এক্স ডট কম নামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত অনলাইন ভিত্তিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমটিই বর্তমানে সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় পে-পাল। ২০০২ সালে তিনি স্পেস এক্স ও ২০০৩ সালে টেসলা মোটরস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। মাস্ক তাঁর জীবনের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকে কমপ্যাক্ট কম্পিউটার্সের একটি শাখার কাছে তাঁর প্রথম কোম্পানী “জিপ টু” বিক্রি করে প্রথমবারের মত মাল্টিমিলিয়নেয়ারের খাতায় নাম লেখান। ২০১২ সালের মে মাসে তিনি শিরোনামে উঠে আসেন যখন তাঁর কোম্পানী স্পেস এক্স প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে ভ্রমনেচ্ছুক যাত্রী প্রেরণ করে। ২০১৬ সালে সোলার সিটি কিনে নেয়ার মধ্যদিয়ে তিনি তাঁর অর্জনের পাল্লা আরও ভারী করেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিকে একজন উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক জগতের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান পাকা করেন।

ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল ইলনের। মাত্র নয় বছর বয়সে ঘরে বইয়ের অভাবে তিনি শেষমেষ পড়া শুরু করেন বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, যা তিনি একসময় পড়া শেষও করে ফেলেন! স্কুল জীবনে অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন তিনি, যাকে আমরা বলি ইন্ট্রোভার্ট। একারণে স্কুল পড়ুয়াবস্থায় প্রচন্ড বুলির শিকার হতেন এবং তাকে একবার হসপিটালেও নেয়া হয়। জীবনের শুরুতেই এত এত মানসিক চাপ কিন্তু কোনোভাবেই তাঁর সাফল্যের অগ্রযাত্রাকে শিকল পড়িয়ে রাখতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ পারদর্শিতা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ব্লাস্টার নামক একটি মজাদার ভিডিও গেম তৈরি করে ফেলেন। মজার ব্যাপার হলো, সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেন!

দক্ষিন আফ্রিকার আবশ্যিক সামরিক জীবনকে “না” বলে মাস্ক কানাডা পাড়ি দেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়া থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এনার্জি ফিজিক্সের উপর পিএইচডি করার উদ্দ্যেশে মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ঠিক করেন যে, পিএইচডি বাদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং ঠিক ২দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন।

আজকের অনলাইন দুনিয়ার ইন্টারনেট পেমেন্টের পদ্ধতি মূলত এই প্রযুক্তিবিদ এলন মাস্কের মস্তিষ্ক প্রসূত। ভার্চুয়াল ওয়ালেটের উৎপত্তি কিন্তু পেপ্যালের হাত ধরেই। আজকের আধুনিক বিশ্বে এক অভিনব সাড়া জাগিয়েছে তার কোম্পানি পেপ্যাল। পেপ্যালের নাম পূর্বে ছিল ‘এক্স ডট কম’। শুরুর এক বছরের মাথায় ২০০১ সালে নাম পাল্টে হয় পেপ্যাল।পরবর্তীতে ২০০২ সালে eBay কোম্পানি এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পেপ্যাল কিনে নেয়, যেখানে এলনের শেয়ারে প্রাপ্ত অর্থ ছিল ১৮০ মিলিয়ন ডলার।পরবর্তীতে ২০০২ সালে eBay কোম্পানি এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পেপ্যাল কিনে নেয়, যেখানে এলনের শেয়ারে প্রাপ্ত অর্থ ছিল ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

২০০২ সালের ৬ই মে ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স (স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলোজিস কর্পোরেশন)।স্পেসএক্স দিয়ে শুরুতেও ইলন মাস্ক বাজিমাত করে দিয়েছিলেন, তা ভাবা ভুল। বরং পরপর তিনটি ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণের পর অনেকে স্পেসএক্স এর অন্তিম সময় দেখে ফেলেছিলেন । তবুও ইলন মাস্ক হাল ছাড়েননি। তিনি নিজের টেকনোলজির উপর শতভাগ আস্থা রেখেছিলেন কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর এই প্রযুক্তির উপর ভর করেই তাঁর স্বপ্ন পারি দিবে মহাকাশে। শত বাঁধা ও ঝুঁকিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হলো। 

আজকের যে ‘টেসলা’ নামের ইলেকট্রিক গাড়ির কোম্পানির কথা শোনা যায়, তা-ও তার তৈরি। ইলেকট্রিক গাড়ির পুরোনো ভার্সনে অনেক আধুনিকতার অভাব ছিল। তিনি সেসব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে লাক্সারি আর সৌন্দর্য বিচারে এক ধাপ এগিয়ে তৈরি করলেন ‘টেসলা রোডস্টার’।এই ‘টেসলা রোডস্টার’ আরাম, সৌন্দর্য, ব্যয়বহুলতা এবং গতি- সবদিক থেকেই যেকোনো দামী গাড়ির তুলনায় কোনো দিক থেকেই কম নয়। তাছাড়া আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তেই তিনি তৈরি করলেন গাড়ি চার্জ করার পাম্প, যেখানে কিনা বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় তার সেই সোলার সিটি থেকেই। এলনের ‘টেসলা রোডস্টার’ গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- একবার সম্পূর্ণ চার্জ করার পর তা একটানা ৪৫০ কিলোমিটার চলতে সক্ষম ছিলো।

২০১৩ এর আগস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের একটি নতুন পদ্ধতির কথা প্রকাশ করেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লূপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা খুবই কম সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। বহুব্যবহারযোগ্য শক্তিতে চালিত এবং আবহাওয়ার প্রভাবমুক্ত এই প্রকৃয়ায় যাত্রীরা ক্যাপসুলের মধ্যে অবস্থান করে একটি লো প্রেশার টিউবের নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ঘন্টায় ৭০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারবেন। মস্কের মতে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন ও ব্যবহারোপযোগী হতে সাত থেকে দশ বছর সময় লাগবে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়া ডিসেম্বর ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মাস্কের মোট সম্পদের পরিমান ২০.২ বিলিয়ন (২২০০ কোটি) মার্কিন ডলার। ২০০২ সালে পে পাল বিক্রি করার মধ্য দিয়ে তিনি প্রথমবারের মত বিলিয়ন ডলার আয় করেন। তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এর মোট সম্পদের পরিমান তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের থেকেও বেশি।











কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.