জ্যাক মা
চীনে কলেজ ভর্তি পরীক্ষা বছরে মাত্র একবার হত। সব কলেজেই একই সময়ে পরীক্ষা হত, এবং পরীক্ষায় পাশ করে কলেজে সুযোগ পেতে জ্যাক মার ৪ বছর লেগেছিল। তিনি ১৯৮৮ সালে হ্যাং-চাও টিচার্স ইন্সটিটিউট (বর্তমান ‘হ্যাং-চাও নরমাল ইউনিভার্সিটি) এর ইংরেজী বিভাগ থেকে বি.এ ডিগ্রী নিয়ে বের হন।
আলিবাবার আগে জ্যাক মা সত্যিসত্যিই একজন পুরোপুরি ব্যর্থ মানুষ ছিলেন। ৪বার ফেল করে কলেজে ঢোকার পর, যখন পাশ করে বের হলেন – তখন ব্যর্থতা কাকে বলে, তা তিনি আবারও হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। জ্যাক মার জীবন কাহিনী এর সবচেয়ে করুণ, কিন্তু শক্তিশালী অংশ এটি।
‘হ্যাং-চাও দিয়ানজি ইউনিভার্সিটি’তে ইংরেজীর লেকচারার হিসেবে যোগ দেয়ার আগে, তিনি ৩০টি চাকরির জন্য চেষ্টা করেন, এবং প্রতিটিতেই ব্যর্থ হন।
আমেরিকান একটি টক শোতে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জ্যাক মা বলেছিলেন :”আমি যখন পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করলাম, ১০ জনের মধ্যে ৯জনের চাকরি হল; আমাকে বলা হল, ‘তুমি উপযুক্ত নও’। – আমার শহরে যখন কেএফসি আসলো, আমরা ২৪ জন চাকরির আবেদন করেছিল। ২৩ জনের চাকরি হল, আমি বাদ পড়লাম। – হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আমি ১০ বার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলাম। তারপর চিন্তা করলাম ‘হয়তো একদিন আমি হার্ভার্ডে লেকচার দেব।“
প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে চীন সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য না পেয়ে, জ্যাক সেই সময়েই তাঁর আমেরিকান বন্ধুদের সহায়তায় চীন সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট খোলেন।ওয়েবসাইটি চালু হয় সকাল ৯:৪০ এ, এবং দুপুর ১২:৩০ এর মধ্যেই চীনের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁর সাথে কথা বলার জন্য ই-মেইল করেন! জ্যাক মা সাথে সাথে বুঝে যান, ইন্টারনেট দিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়।
১৯৯৫ সালের এপ্রিলে জ্যাক মা, স্ত্রী ক্যাথি ঝাং, ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু ও মিলে ২০,০০০ মার্কিন ডলার যোগাড় করে তাঁদের প্রথম কোম্পানী শুরু করেন। “চায়না পেজেস” নামের এই কোম্পানী অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন চীনা প্রতিষ্ঠানকে ওয়েবসাইট তৈরী করে দিত।চায়না পেজেস কোম্পানীটি ৩ বছর চালানোর পর তাঁদের হাতে ৮ লাখ মার্কিন ডলারের মত মূলধন দাঁড়ায়। এরপর জ্যাক মার জীবন কাহিনী নতুন এক মোড় নেয়।
১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জ্যাক মা চীনের বৈদেশিক বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি আইটি কোম্পানীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন।১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের শহর হ্যাং-চাও এ ফিরে আসেন এবং ১৮ জন বন্ধু মিলে অনলাইন পাইকারি পন্য বেচাকেনার সাইট আলিবাবা প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন।১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জ্যাক মা চীনের বৈদেশিক বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি আইটি কোম্পানীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন।১৯৯৯ এর অক্টোবর ও ২০০০ এর জানুয়ারীতে দুইবারে মোট ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট পায় আলিবাবা। তাঁদের এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল, চীন এর আভ্যন্তরীণ ই-কমার্স মার্কেটকে উন্নত করা। এবং সেই সাথে, চীন দেশের ক্ষূদ্র ও কুটির শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগীতায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করা।
২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ঘোষণা দেন, তিনি এক বছরের মধ্যে আলিবাবা থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে শিক্ষার প্রসার ও মানব সেবার কাজে মনোনিবেশ করবেন।
এর আগে তিনি আলিবাবার সিইও পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। জ্যাক মার কথা অনুযায়ী, প্রতিটি সফল মানুষের ৫০ বছর বয়স হওয়ার পর অর্থের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে মানব সেবা ও নতুনদের সফল করার কাজে মনোনিবেশ করা উচিৎ।
কোন মন্তব্য নেই