Header Ads

নিকোলা টেসলা


 
৩০০ এর বেশি আবিস্কারের প্যাটেন্ট ছিল বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার। এছাড়াও অনেক আবিস্কারের প্যাটেন্টই গ্রহন করেননি। আর অনেক আবিষ্কারের আইডিয়া চুরি করে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা নিজের বলে চালিয়েছিলেন। আবিস্কারক হিসাবে তাঁর ক্রেডিট নাই এবং কিছু কিছু আবিষ্কার ন্যাক্কার জনক ভাবে কিছু বিজ্ঞানী চুরি করে নিজের নামে করেছিলেন। অন্যরা যেখানে থিওরি আকারে তাঁদের আবিষ্কার গুলোকে প্রকাশ করতেন সেখানে নিকোলা টেসলা বাস্তবে তৈরি করে দেখাতেন। তাঁর প্রত্যেকটা আবিষ্কারই ছিল অন্যান্য বিজ্ঞানী থেকে অনেক বিস্ময়কর।

১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই ঠিক রাত ১২ টায় বৈরী আবহাওয়া ও প্রচণ্ড বৃষ্টিবাদলের সময় তাঁর জন্ম হয় । তিনি জন্মসূত্রে সার্বিয়ান। কিন্তু পুরো শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ায়। এ কারণে সার্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া আজও টেসলাকে নিয়ে টানা হেঁচড়া করে, বিতর্ক করে- তিনি আসলে কাদের? বিতর্কের মূল কারণ সেই সময় দুটো এলাকাই অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। যা পরে ভেঙ্গে সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে পরিণত হয়। তার পিতা ছিলেন একজন যাজক।

স্কুলে/কলেজে তিনি তাঁর প্রতিভার বিস্ময় দেখাতে শুরু করলেন । বড় বড় ত্রিকোনামিতিক ক্যালকুলাস তিনি খাতা কলম ছাড়া ব্রেইনে চিন্তা করেই উত্তর বলে দিতেন। তিনি এতটাই মেধাবি ছিলেন যে কলেজের শিক্ষকরা তাঁর বিস্ময়কর মেধা দেখে তাঁর বাবাকে চিঠি দিত ।Engineering পড়ার সময়ে এক শিক্ষকের সাথে তাঁর কোন একটা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয়। পরে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা ল্যাবে কাজ করে প্রমান করেন যে তাঁর ধারনাই ঠিক। এই ঘটনা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে তিনি সকলের কাছেই আরও বেশি বিস্ময়কর ছাত্র হয়ে উঠেন।

১৮৮৪ সালে নিকোলা টেসলা আমেরিকা যান। সাথে ছিল ৪ টি কাপড় আর নিজের পরিচয় পত্র। আর ছিলো একজনের একটা চিঠি যেটা নিকোলা টেসলাকে বলা হয়েছিল এডিসন কে পৌঁছে দিতে। সেই চিঠিটাতে লিখা ছিল
"আমি পৃথিবীতে দুইজন জ্ঞানী লোককে চিনি, একজন তুমি (এডিসন) এবং অপরজন তোমার সামনে দাড়িয়ে আছে (নিকোলা টেসলা)।"

তাঁর আবিষ্কৃত AC বিদ্যুৎ পুরা পৃথিবীকেই আলোকিত করেছে এবং আমাদেরকে একটা আলোকিত পৃথিবী দিয়েছে। যদি বিনিয়োগকারীরা তার ফান্ডে কাজের জন্য টাকা দেয়া বন্ধ না করত তাহলে আজ পৃথিবীবাসীকে নিকোলা টেসলা কোনো তার ছাড়াই বিদ্যুৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে Wireless Electricity ফ্রিতে দিয়ে যেতে পারতেন।

নিকোলা টেসলা এমন একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কোন তাঁর ছাড়াই বিদ্যুৎ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠানো যেত।

তখনকর সময়ে একজন নামকরা ব্যবসায়ীর থেকে ফান্ড নিয়ে তৈরি করেন ১৮৭ ফিট উঁচু একটি Tesla Tower যেখান থেকে তাঁর ছাড়াই বিদ্যুৎ পাঠানো যাবে। এবং তিনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে সারা পৃথিবীকে বিদ্যুৎ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি পুরা পৃথিবীকেই একটা conductor হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। এবং সার্থকও হয়েছিলেন। কিন্তু প্রোজেক্টের কাজ শেষ হবার আগেই বিনিয়োগ কারীরা টাকার জোগান দেয়া বন্ধ করে দেয়। কারন বিদ্যুৎ কোম্পানি গুলোর ভয় ছিল যদি সারা পৃথিবীতে ফ্রিতে বিদ্যুৎ দেয়া হয় তাহলে কোম্পানিগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। পরে এই আবিষ্কারটি হারিয়ে গেছে । না হলে আজ আমরা তাঁর ছাড়াই ফ্রিতে বিদ্যুৎ পেতাম।

১৮৮৪ সালে নিকোলা টেসলা টমাস আলভা এডিসনের কোম্পানিতে চাকুরী নেন। সেইসময় তিনি এডিসনকে বলেন যে এডিসনের ফ্লুরোসেন্ট বাতি নিয়ে বৈদ্যুতিক গবেষণার কাজ অনেক তাড়াতাড়ি এবং আরও কম খরচে তিনি শেষ করতে পারবেন। এডিসন প্রস্তাব দেন যদি টেসলা এটা করতে পারে তবে তাকে ৫০,০০০ ডলার পুরষ্কার দেয়া হবেউপরোক্ত প্রতিশ্রুতি প্রদানের পর টেসলা মাস কয়েক ক্রীতদাসের মত খেটে তার প্রজেক্ট শেষ করলেন এবং ফ্লুরোসেন্ট বাতিকে আমরা বর্তমানে যেভাবে চিনি সেভাবে রূপদান করলেন। তারপর যখন এডিসনের কাছে তার প্রাপ্য পুরষ্কার চাইতে গেলেন এডিসন তখন বেশ একচোট হেসে পাক্কা ভিলেনের মত বললেন, “লুলজ! আপনি তো দেখি আমেরিকান রসিকতাও বুঝেন না।”

টেসলা তখন ক্ষেপে গিয়ে এডিসন কোম্পানির চাকুরী ছেড়ে দেন। এই সুযোগে তাকে লুফে নেয় এডিসনের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ওয়েস্টিংহাউজ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি‘ । কিছুদিনের ভেতরেই শুরু হয়ে যায় বৈদ্যুতিক যুদ্ধ। একদিকে এডিসনের স্থির বিদ্যুৎ (ডিসি কারেন্ট) বনাম অন্যদিকে ওয়েস্টিংহাউজের সাথে মিলে টেসলার চলবিদ্যুৎ (এসি কারেন্ট)। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটা ‘বৈদ্যুতিক যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

শেষ পর্যন্ত টেসলার তত্ত্বই ঠিক হলো। তার চলবিদ্যুৎ এডিসনের স্থির বিদ্যুতের চেয়ে বেশী কার্যকরী প্রমাণিত হলো। টেসলার চলবিদ্যুৎ আবিষ্কার না হলে আমাদের হয়তো আজকে এডিসনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হতো যেখানে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে আলাদা আলাদা জেনারেটর বসানো লাগতো। কিন্তু টেসলার প্রযুক্তি অনুযায়ী এখন বহু মাইল দূরে একটা পাওয়ার স্টেশনে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এবং সেখান থেকে তার দিয়ে টেনে বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

এডিসন দেখলেন তার ‘ডিসি কারেন্ট’ টেসলার ‘এসি কারেন্টে’র কাছে ভোক্তাবাজারে বড় ধরণের মার খাবে। তাই তিনি প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগলেন যে– টেসলার তৈরি বিদ্যুৎ নিরাপদ নয়। বরং এতে জীবনহানি ঘটা সম্ভব। সেটা প্রমাণে তিনি জনসম্মুখে একটা সার্কাসের হাতিকে এসি কারেন্ট ব্যবহার করে শক দিয়ে মারেন। শুধু তাই নয়, তৎকালীন ‘গ্যারি কমিশন’ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের বদলে বিকল্প কিছু খুঁজছিলো। এডিসন সুযোগ বুঝে টেসলার এসি কারেন্টকে ব্যবহার করে চেয়ারে বসিয়ে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের প্রস্তাব করেন। এমনকি মানবজাতির কল্যাণার্থে(!) ফাঁসির মত ভয়ংকর শাস্তির বিকল্প হিসেবে এই মহান বিজ্ঞানী এডিসন নিজ খরচে এবং নিজ উদ্যোগে এমন একটা চেয়ারও প্রস্তুত করে দেন। ১৮৮৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর জোসেফ শ্যাপ্লো (Joseph Chappleau) নামক এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে এই চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মাধ্যমে মানবসভ্যতায় এক নবদিগন্তের সূচনা হয়। ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মত মানবতার প্রশ্নের সমাধান করে মানবজাতিকে বিবেক যন্ত্রণা হতে মুক্তি দেন এডিসন। একইসাথে সবার সামনে প্রমাণ করেন টেসলার চলবিদ্যুৎ কতটা ভয়ংকর।

মারকনির রেডিও আবিস্কারের কয়েক বছর আগেই নিকোলা টেসলা রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন এবং রেডিও তরঙ্গও তার গবেষণার কাজেও ব্যবহার করেছিলেন। 1943 সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট সত্যটা জানার পরে মারকনির রেডিও প্যাটেন্ট বাতিল ঘোষণা করে নিকলা টেসলাকে রেডিও আবিষ্কারক হিসাবে ঘোষণা করে। কিন্তু একবছর পর প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় মারকনি প্যাটেন্টটি নিজের নামে বহাল রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

নিকোলা টেসলা রিমোট প্রযুক্তি এর জনক ছিলেন। তিনি একটি খেলনা নৌকাকে দুর নিয়ন্ত্রিত ভাবে চালাতে গিয়ে একসাথে ৩ টি আবিষ্কার করে ফেলেন। ১. পৃথিবীর সর্বপ্রথম রিমোট , ২.পৃথিবীর সর্বপ্রথম রোবট , ৩.পৃথিবীর সর্বপ্রথম গাইডেড মিসাইল সিস্টেম।

1893 সালে নিকোলা টেসলা এমন একটি মেশিন তৈরি করেন যা দিয়ে বড় মাত্রার ভুমিকম্প তৈরি করে ফেলেছিলেন। এটি মূলত ছিল একটি Oscillator যার নাম দিয়েছিলেন “Tesla Oscillator” এবং তিনি অনুভব করেছিলেন তার যন্ত্রটিকে যদি খুব বড় পরিসরে তৈরি করা হয় পুরা পৃথিবীতে ভূমিকম্প সৃষ্টি করা যেতে পারে। মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তিনি নিজের হাতে হাতুরি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন এবং আবিষ্কারটিও হারিয়ে যায়

নিকোলা টেসলা সেই সময়েই এমন একটি ক্যামেরা তৈরির কথা বলেছিলেন যা মানুষের চিন্তা শক্তি থেকে ডাটাতে কনভার্ট করে সেই গুলোকে দেখা যাবে একটি স্ক্রিনে, এমন একটি প্রজেক্ট। কিন্তু তিনি আর্থিক কারনে প্রজেক্ট করতে পারেননি। সম্ভব হলে মানুষের কোন কিছুই আর গোপন থাকতো না

এটি ছিল World War 2 এর সময়ের একটি প্রজেক্ট। আমেরিকার নৌবাহিনী জাহাজ অদৃশ্য করে শত্রু বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই প্রজেক্ট এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো নিকোলা টেসলাকে। সেই প্রজেক্ট এ নিকোলা টেসলার অধীনে আলবার্ট আইন-স্টাইনকেও টিম মেম্বার করা হয়। নিকোলা টেসলা ছোট একটি Boat এর ক্ষেত্রে সার্থক হয়েছিলেন। নিকোলা পুরোপুরি অদৃশ্য করে ফেলেন সেটিকে। কিন্তু এই পরীক্ষাটি করে সফল হওয়ার পর কিছু ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর নিকোলা টেসলা প্রজেক্ট থেকে অব্যাহতি নেন এনং তিনি নিষেধ করেছিলেন আইনস্টাইন সহ বাকি যে মেম্বরদেরকে যাতে এই বড় জাহাজ এর ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি না করা হয়। 

 ১৯৪৩ সালের ৬ই জানুয়ারিতে টেসলা বৃদ্ধ বয়সে, সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় নিউইয়র্কের এক হোটেল রুমে মারা যান। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.